নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় এলাকার ত্রাস, আলোচিত মঈনুদ্দীন হত্যা মামলার প্রধান আসামি আকবরের নেতৃত্বে একটি চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী দলের বেপরোয়া তৎপরতায় সরকারিভাবে টোল আদায় করতে পারছেন না বদরখালী টু করিয়ারদিয়া ফেরিঘাটের (বিলুপ্ত লঞ্চঘাট) বৈধ ইজারাদার মোহাম্মদ রুবেল। অথচ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চলতি ১৪২৭ বাংলা সনের পহেলা বৈশাখ থেকে ওই ফেরিঘাটের পণ্য উঠা-নামার সময় টোল আদায়ের জন্য তাকে ইজারাদার হিসেবে নিয়োগ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
অভিযোগ উঠেছে, ইতিমধ্যে ইজারা প্রাপ্তির দুই মাস চলমান হলেও আলী আকবরের নেতৃত্বে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের হাতে সবাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, এই ঘাটটি বৈধভাবে লিজ পেতে সরকারি কোষাগারে ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন ইজারাদার রুবেল। এ ছাড়াও ঘাটটি বৈধভাবে ইজারা পেতে আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ সর্বমোট প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি। কিন্তু অব্যবহিত সময়ে তিনি ওই ফেরিঘাট থেকে এক টাকাও টোল আদায় করতে পারেননি। ফেরিঘাটের ইজারাদার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
ইজারাদার মো. রুবেল অভিযোগ করে চকরিয়া নিউজকে বলেন , দরপত্রে অংশ নেওয়ার পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সায়রাত মহাল হিসেবে তাকে ইজারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মো. আবুল মনসুর পণ্য উঠা-নামার সময় টোল আদায়ের জন্য ঘাটটি বুঝিয়ে দেন। কিন্তু ঘাটটি বুঝে নেওয়ার পর পরই হত্যা মামলার প্রধান আসামি আলী আকবরের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রকাশ্যে এসব সন্ত্রাসীর অপতৎপরতায় তার প্রতিনিধি সেই ঘাটে এক মুহূর্তের জন্যও অবস্থান করতে পারেনি। এই অবস্থা অব্যাহত রয়েছে ইজারা প্রাপ্তির পর থেকে।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খাইরুল বশরের ইন্ধনে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আলী আকবরসহ একদল সন্ত্রাসী ফেরিঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অবৈধভাবে টাকা তুলছেন। এতে বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার প্রতিনিধিকে ঘাট এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে প্রাণে হত্যার হুমকি দেন। এ নিয়ে ইজারাদাতা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলেও এখনো কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে চকরিয়া থানায়ও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের পর বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) সুজন সেন উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকেও কোনো সুরাহা হয়নি। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য দুই দিন সময় নিয়েছেন পুলিশের আইসি।’
বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুজন সেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় একটি মাদরাসার এতিম শিক্ষার্থীদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঘাট এলাকা থেকে পণ্য উঠা-নামার সময় টাকা উত্তোলনের জন্য একটি অনুমতি পত্র দিয়েছেন। তার পরও যদি এখানে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কাউকে বৈধ ইজারাদার নিয়োগ করা হয় তাহলে তা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমতি প্রদানকারী বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খাইরুল বশর চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমি যখন প্রথম চেয়ারম্যান হই, তখন স্থানীয় মাদরাসার আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যয় নির্বাহের জন্য ঘাট এলাকা থেকে চাঁদা তোলার একটি অনুমতি পত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরইমধ্যে যদি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কাউকে বৈধ ইজারাদার নিয়োগ করেন, তাহলে আমার দেওয়া অনুমতি পত্রের কোনো বৈধতা নেই।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বদরখালী টু করিয়ারদিয়া ফেরিঘাটটি যদি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কাউকে ইজারা দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনিই বৈধভাবে টোল আদায় করতে পারবেন। এজন্য ইজারাদারকে প্রশাসন থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।’
পাঠকের মতামত: